Sunday, September 6, 2009

চুল

আক্রান্ত হবার আগে অন্যকথা... আপনে-গোপনে
পর্দা-শৃঙ্খল, বেলা গুনে গেঁথেছি ক্ষত-নির্মিতকাল
আপনে-গোপনে বুকের ভেতর খুলে পড়ে জল
অপাঠ্য দেহছাল, শিথানে পৈতানে কিছু অনিচ্ছা
                                 রূপ ধরে আছে মনে-বিজনে

সদায় তাকিয়েছি ভেজাচুলে... মিশবার ইচ্ছে ও লোভে
ক্ষরানোর ছলে থাকছে না এইবেলা,কে সাহস জোগাবে?

নিজের ভেতর নিজেকে ভুলিয়ে রেখেছি, আশ-পড়শির পাশে
বেলায় বেলায় শাদা হবে চুল জড়িয়ে ধরা অন্যপ্রকাশে
                                                     জলে তেলে মিশে

মাথা

পেতেছি বালিশে শীত তাড়ানোর ছলে
শুয়ে থাকার গর্ব গুলিয়ে তুইও নিদ্রা তাড়িত হলে
যা জানিস ভেবে চিন্তে বলিস্ স্বপ্ন নাই- বা জাগালে

বুদ্ধির কোন অহংকার নেই, প্রয়োজন দৃশ্যময় লুপ্ততাড়না
হিতে বিপরীত হলি তুই; আত্নবোধে কমে না দুঃখ-বেদনা

যাবো চুপে তৃষ্ণার্ত বুকে, দেখবো কাঁচাজলের শিহরণ
ছিটা বৃষ্টিতে তরমুজের চাষ, শ্বাসের ভেতর ভেজা গুটিস্তন
না-ফোটাজলের ফাঁকে তুই একাকি হ’লি খানখান

কপাল

শীতরাত্রির পাশে যারা আমাকেও মিথ্যে রোমন্থনে
ফেলে রেখেছে তারাও জানে— কোথায়; কবে
কার তাড়া খেতে খেতে কার কথার লোভে স্বস্তি এলো মনে
কারণ নিয়তির দোষ দেবো না ভিনদেশে খেয়ে-পরে
নিজের ভেতর প্রশ্ন করি, কেন টানছি গ্লানি, শূন্যতা

তোমরাই প্রশ্ন করো? জানতে চাও! ভোঁতা জীবনের কথকতা
আমি শীত না-সহে তোমাদের কিভাবে বলি শৈত্য-অভিজ্ঞতা
সুখে তো ভালোই আছে, টেমস্ নদীর পাড়ে
শুধু তোমাদের জন্য দুঃখ ফোটাই দিবারাত্রিভোরে

টিপ

দেহে জেগে আছো জেনে শীতঘন বনে
অতি বিনয়ের সাথে তাকাতে হয় গোপনে
তোমার ভাষ্যমতে চোখের তৃষ্ণা দেহমনে
বশ এনেছি পুণ্ড্রবর্ধনের কাছে

দ্বিধায়-ত্রিধায় পুণ্ড্রহাওয়ায় চাপা দিতে দিতে
তাকেও নজরানা দেব রাত্রিগণকের হাতে

নিরলে তাকালে গোপনে তার ব্যাখ্যা, অদ্ভুদ সুন্দর!
সবই তো নিয়ম ভুলে যাওয়া কৃতি...স্থির প্রতিকৃতি
একদিন তোরও কপালে টিকলি পরাবো চিহ্ন... যতি
সোনালি রূপালি-গোলাপি টিপ পরাতে চাই সম্মতি

ভ্রু

চক্রাকারে ঘুরে তোমার প্রকাশ চোখের উপরে
দৃষ্টির মর্মভেদ শাসন হলো মগজের রাশটেনে
মান-অভিমান কিম্বা বির্নিমান লক্ষ্য রাখছ—
যাতে নিজ ছায়ার সাথে চোখ দুটি জাগে, কিন্তু
তোমার ভ্রূ’তে আই-ভ্রূ ছাড়া কিছুই দেখি না আগে

তোমার ইচ্ছে পূরণ, আমারি সরণি
পেরোবে হয়ত সবুজ সমীকরণ

এ-বসন্ত দিনে বনে বনে যত আয়োজন
মনেই থাকে না সরি! মনের ভেতর কার খবর্দারি
কার ঘনিষ্ঠতা কতটুকু তাও জিজ্ঞেস করিনি
সে-ও এখন মনপাখি, প্রিয়নারী, শাড়িবাসিনী

চোখ

চোখ গাঁথলাম চোখে গুপ্তনাম জমজ ভাই
চোখ ঘুমিয়ে গেলে ছোঁ-মেরে ঘুমকে জাগাই
তোমাকে মৎসরূপে ধরি... না-বলা এ টুকুই
অবশেষে চোখও স্বীকার করলো তাকানোর চেয়ে আর
আর কিছু সুন্দর হতে পারে না, চোখ স্বপ্নভর তোলপাড়
চোখ বন্ধ করে দেখি চোখের বিকল্প শুধু চোখ-
বাসনারস নিজেকে অস্থির করে তুলে, তাই না? সখি

সে দিন থেকে চোখের ফাঁদে পড়ে, দু-চোখ বুঁজে শুধু
চোখের সৌন্দয্য দেখি

নাক

বাহিরের দৃশ্য দেখে দেখে মিটে যাচ্ছে স্বাদ
এখন অপরাদ মেখে বেঁচে আছি শবদেহে
তোমার গতিবেগ ছুঁতে আরো কিছু দিন
শ্বাস টেনে টেনে ব্যবধান খুঁজে নেবো ব্যবধান
ভীষণ শীত আবিস্কার করি পীতে—
কেন এই নির্বাসন ঘুমের আবেশে
নাক টেনে টেনে জ্বলছে-নিভছে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ...
কষ্ট সহে এগুতে চাই, যা হোক; কিন্তু সংশয়!

কান

পায়ের আওয়াজ শুনে বুক ধরফর করে
তীব্রশীতে অর্ধঅঙ্গ পুড়ে গেলে প্যান্টে—
পকেটে হাত লুকাই, হাতে হাত ঘষে
দেহে এতো শরমগাহ, এতো বিষব্যথা
ছাই-চাপা কপালে অহং ছড়ানো হলে
কে কাতরতা নেবে? কাকে না-ছুঁলে ব্যর্থতা
ব্যর্থ হলে কিছু পান্থ চোখে রেখে মনে মনে
ঘুমিয়ে যাই ঘুমের শখে

চোখের বিচলন দেখে ঠোঁটের অস্থিরতা কোন সেন্সে
দেহের তালাশে শাল বন পুড়ে অবশিষ্ট আশ্বাসে

গাল

যদি গিলা যেত গাল মিটে যেত জজ্ঞাল
তোয়ালে ফুটতো না মৃদু কালোতিল
অভিমানি হতে শিখা...না-ভেজা আঙুল
স্বাচ্ছন্দ্যখানি হাল বর্ষায় করেছো সচল
অবগাহন-ঘ্রাণকথা, খোঁপায়গাঁথাচুল

সৌন্দর্য্যে পুজো কে না করে আমি শুধু বাদে, তোকে
দেখে লুকাতে পারিনি মুখ, ধুর-ছাই! মনে মনকে বকে

দূরের ফাঁকে নাকি আড়ালে-আবডালে তুলতুলে গালে
এখানেই হতবাক কতটা প্রেমাস্বাদ? নরম-ছরম লাগে
আমাকে অনুপস্থিত রেখে তুলতুলে গালের দায়ভার
                                   কোথায় রেখেছিলে

মুখ

আমার ভেতর কে গো...? দেহজাগা রাত্রিকোজাগর
অথির বেলায় আমাকেও পোড়াও মুখ ও শরীর
ভয়ে ভীত! দৃষ্টিক্ষমতা নিশ্চুপ না-থাকার গরিমায়

মুখ ফুটে কিছুই বলবো না, দেহে জাগুক যত বিস্ময়!
কাউকে বাঁধিনি ঋণে আহা! মাংস খুলে যাবার ডরে
মনের উপভাষা মৌচাকে তালা, দেহের অভ্যন্তরে
নিজেকেই পাঠ করি রক্ত ও হাড়ে

আয়নার বিপরীতে বেঁধে রাখো হৃদয়, দ্বিধা সংশয়
মুখ খুললেই বায়না ধরো ওই বে-ভোলা হাওয়ায়

ঠোঁট

ভরা যৌবণে আমিও উদ্বেল, ভীষণ আকুল
নোনতা জলে সাধ্য নেই, জেনে যন্ত্রণা খেয়ে
বাধ্য করো ক্ষণদূরত্ব ছুঁলে এ সব কথা
আশপড়শির কান ছুঁয়ে গেলে চুম্বননেচ্ছা
উজার করে দাও বিয়োগের শেষ ভাগে
মন থেকে নাও কিংবা মনে পড়ে নাও

স্বত-চলাচলের মহিমায়, কি পেলাম ত্যাগে? তবে-
সেও চায় পরিত্রাণ, হাতে-পায়ে পারফিউমের ঘ্রাণে
চুম্বনের স্বাদ কোমল! নাকি মখমল শব্দহীন ঠোঁটই জানে

দাঁত

খাওয়ার আগে রান্নাবাড়ার ঘ্রাণ ভালো লাগে খুব
মাছ মাংশের হাড়গোড় চিবানো মানে তৃপ্তি...
                                  বাড়তি উপভোগ
এতো যে বলো ভুলে যাওয়া ভালো—
পরে হবে। এমন বাহানায় খুলে নিতে হলো
অতিনর্মেরফল! যেমন দৃশ্য-দরশন; পূর্ণ বিবরণ
এ-সম্পর্ক জানতে না চাইলেও বলবো—
হাত ধরো, ভুলে যাও-
ভালো থাকো। নিরাপদে থেকো।

সুখে-দুঃখে ঠাট্টার ছলে হইক গভীর ক্ষরণ... ঘনিষ্ঠতা
ওহ! দাঁতের যন্ত্রণা... কামড়া-কামড়ি ছাড়া সব স্বাদ বৃথা

জিব্হা

কারো বাসনায় ইতস্তত লালার ফাঁকে
গড়িয়ে নামবে না জেনে তৃষ্ণা-সম্ভবা-জল
কুড়িয়ে রাখছি; ঢাকছি তোমার করুণা খুলে
বাকিসব সারিবাঁধা আতসকাঁচের দিকে
ফেনিয়ে উঠছে, চেঁচিয়ে উঠছে; ছোঁয়ালে

জিব্হার স্বাদ লবণহীন দেখছি লালার ফাঁকে
আমাকে টানছে আজ জলপিপাসার দিকে

গলা

গ্রহণপ্রশ্নে তুমি এতোটা সহজে ধরে রাখো বোধ
কতটা সহজে এগুলে এবারের মতো ক্ষমা পাবো
ভুলে যাবে অজানা ক্রোধ

লজ্জার প্রকৃত অর্থ কী? এই ভয়ে একটানা মন
এতক্ষণ পিপাসায় লুকিয়ে থাকা চিহ্ন ও প্লাবন
ভুঁই-লাকড়ি ছাড়া তুমিও জ্বলতে পারো করুণা
                                                কংকাল
প্রেরণা কি পাঠাতে বললে—
খণ্ড খণ্ড জল, খালিগলা... হারানো ক্রিস্টাল
ত্রিকালদর্শী! অসহায় বলবো না তাকেও
ঘরগৃহস্থালি, তুমিআমি একাই জলফল

গুপ্তবাক্সে সোনাদানা রেখে আজ খালি গলায়
সান্নিধ্য ছুঁতে এলে পোড়া-মাটির গহনায়

হাত

আশা নিতে নিতে তৈরি হচ্ছে দু’হাতের জ্বর
এ-ও কি আশা নিজের ভেতর চলে যেতে যেতে
                                              সহজ নিথর
ভীতু ঠোঁট নিয়ম ভেঙে আদর করল তালুতে
এমন ধারণায় প্রথমবার ঘ্রাণ লেগেছে মনে

গুপ্তচর্চায় বলবো না; এরই নাম হয়ত অসহায়

বলছি যদি হাতে রাখো হাত; স্মৃতি-প্রীতি-সুধা
মনে থেকে যায়; কার স্পর্শে কে পুড়ে
কে-বা হারায় মুখরতায়, তসবিদানায়

বুক

তোকে খুলতে না-পারা তারও কি দর্শন আছে? নাকি সংযমের অভিজ্ঞতা; সহনশীলতা
জানা যাবে আরো...আরো কিছু কাল পরে
                                             অন্তরলোকে
যখন তোর সরলতাটুকু হেসে হেসে ভাসবে সাতরঙাজলে
নিজের খুশিমত নিজের ভেতর একাকি খুলে যাওয়া
                  কি যে আনন্দের, বুঝবে তখনই
যখন আমাকে শাসন করা হবে চোখের উপর

তোকে খুলতে না-পারা ব্যর্থতা নয়, ঘ্রাণ গুনে ত্রিফলা
গোপনে তাড়াতে পারিস্ গোলকধাঁধাঁ, রজঃস্বলা

তিল

আমাকে ভেদ করে জেগে ওঠা রহস্য বিন্দু

আদি শিহরণ সচল হৃদয় কোন মতলবে
খেলছিল ব্যথা-বিচ্ছেদ না-ফাটা কালোতিল
কারো চাহনি কখনও তাড়া করলে আদরের চিহ্নে

দেহবুক ছিঁড়ে ইচ্ছে বিন্দুর চরে জল-বৃষ্টি-জ্বলা
সেও জেগে ওঠা ছেড়া স্পন্দন, দেহবেহালা

মর্মকথা সবই তো সাময়িক ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য-কৈফিয়ত
বিনিময় পশমে খাড়া করো না আকুলতা, দেহ-জড়িভূত

স্তন

অজানা ব্যবধির পাশে রূপ ধরে আছে স্পর্শ কেঁপে ওঠার আগে
অবাক চোখে তাকাই তার প্রাজ্ঞতা নিয়ে
দৃষ্টি ঝুলে পড়ার আগে
আপেল বন সামনে দাঁড়ালে পাশ ফিরে তাকাই
ইচ্ছেকে খুন করে করে নিজেই খুন হতে চাই

নাভি

একবিন্দু জল থেকে জন্ম- তিন পাক খুলে এ-ও জানি গড়াগড়ি শিখেছি জলের আদরে
আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা মায়ের জঠরে
জন্মের পর কেঁটে দিলে বাঁচি! কি লাভ বেঁচে?
একদিন ফুরাবে দেহের মায়া জগৎ সংসারে
মাটির দেহ মাটিতে গলে-পচে হবে কংকাল
রূপ নেবে কম্পোষ্ট সারে

নাড়ির টানে পিতা-প্রপিতামহ ফিরছেন জনে জনে
আমিও বার-বার ফিরি আমার মায়ের টানে

লোম

তুমি যাই করো কিছুই বলবো না সহোদর; কেউ যদি কান পেতে শুনে
মনে রেখো সহৃদয়ে
ভাবো মনে মনে

তোমার বিপক্ষ আমার স্ব-বস্থান প্রলয়ের দিনে

কোমর

বেঁধে রাখো তামা-কাসা; পঞ্চ-ধাতু কবজ শূন্যান্তরে বেঁচে আছে জন্মঋণ
প্রথাগত নিয়ম বলে দেয় কোমরে কালো তাগা
প্রথম বেঁধে ছিল মা
কিন্তু সম্পর্কস্থাপন বশ করে মিশ্র জীবনের কারুকাজ
কার অনুভবে ইচ্ছে সাথে মিশে যাচ্ছে দেহের লাজ
যশ-খ্যাতি যা পাবার গোপনে পেয়ে যাবো আজ

তুমি তাবিজে রেখেছো লাজ-শরম অজানাসূত্রসন্ধ্যান
কবজে রেখেছো ইচ্ছে শাসনসহ মোহ উপাদান

আঙুল

মুঠো খুলে দেখি তোমার মৌন সমর্পণে খুলে যাচ্ছে বাতাসের কথা; বুক ও হৃদয়
রেখার অক্ষমতায় পুরো দশ আঙুল খুলছি
অঙ্গুঁরীর ভালোবাসায়

নখ

কেউ স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দেয় না যাদের কাছে ওসব কথা ছোট হয়ে গেছে
তাদেরও চিনি না আমি, অভিন্ন হৃদয়ে
বেড়ে উঠলে নিজেরও হু-হু করে মন
কৌতূহল মিশে, ডুবে যেতে যেতে
পরগাছাও ভালো পোশাকের ভেতর
                                 লোমে ও বোতামে

এতো কাঁটাকুঁটি এতো ঘষামাজা ইস্পাতে
পাশে রেখো তোমার ওই দরদীয়া হাতে


পা

দৃশ্য পান করা মায়া-র সাথে যদি স্বভাবী ছায়া কোনোমতে পর্দায় দোল খেয়ে
সুখস্বপ্নে ফিরে আসে- দেহে ঢুকে যদি
দুলিয়ে যায় মন, নিশ্চুপ দেহের শিহরণ
তবে কি পুষিয়ে নেয়া যাবে?
তোমার দু’পায়ের ফাঁকে আগলে রাখা
                                হাঁটার শূন্যস্থান-
কেবল তুমিই যদি পথ দেখাও- চোখ মেপে
দেখবো; দেহ খেলে আসা রূপ-পরিবর্তনের হাওয়া
কোথা থেকে এলো; দেখতে কেমন...

স্ব-গৃহে ফিরবো না কেউ যারা চলে গেছে
ডানায় উড়ে, হাঁটার ক্লান্তি পায়ের তলায় রেখে
আমিও হারাবো একদিন বেড়িবাঁধা পায়ে

মিলেমিশে

মুগ্ধ হলে চিরকাল ঢেলে দিও ইচ্ছের অধিক কাঙ্খিত চোখে অপূর্ণতা ফিরিয়ে দিতে পারো বুক চেপে জামায়; শার্টের বোতামে
চোখ খুলে দেখো কাকতাড়ুয়া দাঁড়ানো পেরেক গাঁথা বুকে

মাটি ফেঁড়ে সমাধান করো মানব বৃক্ষের সম্পর্ক কোন মর্মে


যতদিন বৃষ্টিপাত হয়নি ততদিন জলতৃষ্ণায় লতা-পাতা ঝরে
হৃদপিণ্ডের কাঁটাছেঁড়া দাগ শুকায়নি তবু যন্ত্রণায় থোড়া-থোড়া জমে
চোখ তৃপ্ত হলে কুয়ো জলে যাবে না চোখ; ছোঁবে না আদরে

যদি কলঙ্ক শুকাতে চাও এসো মিশে যাই দমে দমে

২.
ভাবনা শূন্য হলে ব্যথা পাবে; কার সাধ্য তোমাকে ছোঁবে- তুমি কী চাও
হৃদয় জাগাতে এসে চক্কর খেলে ঘোরে; ফিরে গেলে রোদের আঁচলে
মাইল-মাইল হেঁটে পেয়েছি পদচিহ্ন-- ফের মনভ্রমরা হয়েছে মৌমাছি মৌ

সবুজ ঘাসেও শাদাফুল ফোটে, চিরকাল মালা গেঁথেছি বরফের জলে


ঘুম নেই চোখে, আলোছায়ার ফাঁকে তা কক্ষনো মেনে নেয়া যায় না
জানি নির্লিপ্তচোখে ক্ষমা পাবো না; ভয় শুধু শরম খুলে নিলে
যারা ঘুম চুরি করে স্বপ্ন দেখে তাদের আর জাগিও না; করো না ছলনা

ক্ষমা যদি করো মানতের সিন্নি দেবো কুমারী প্রলোভনে কলার বাকলে


৩.
কান্নারও সুর আছে, জল শুকালে চোখেরও হাহাকার কমে
উৎসের খোঁজে বাঁধা পড়বে কে? কে নেবে আঙুলের ঋণ
চক্রাকারে ঘুরে দাঁড়িয়েছি জিভের কোণায়; বৃষ্টিকাঙ্খা ধুলায় জমে

মনে কি পড়ে না?-- তিলে তিলে নিজস্বতা কেড়ে নিলে সেই দিন

নারীর ঠোঁটের গন্ধ মানে ভিন্ন আমেজ, লাজ ঢাকতে চোখে লাগিয়েছি সুর্মা
যতবার এগিয়েছো তুমি নতজানু হয়েছি ততবার, কে তবে ছিল দায়হীন
রঙিন ঠোঁটে জ্বালাতন বাড়ে- স্মৃতিডালায় ৯ই মার্চ; এবার করো ক্ষমা

আল মাহমুদের 'সোনার দিনার নেই' চুম্বন ছাড়া কিছুই পাবে না কোনোদিন


৪.
দাঁতের ফাঁকে জমেছে হাসি, দোহাই তোমাকে মুখটি করো না মলিন
চোখের পোড়াক্ষত যদি রুমাল বেয়ে উঠে; নামবে তবে কার দোষে
সময় চলে যায় দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে; নতুন স্বপ্ন নিয়ে ভোর আসে প্রতিদিন

আঘাত জেগে ওঠে ঋণশোধবুকে, কার অহং ছড়ানো বাতাসে

দাঁতে দাঁতে চেপে ধরি আয়ু, তোর দাঁতের তৃপ্তি কামড়ানো নোখে
অশ্রুভারে জ্বলে ওঠে বুকের শরম, গ্রহণ রাত্রি পোড়াবে তবে কার পাশে
রাত্রি আমাকে দৈন্য করেছে, লজ্জায় মিশে যাবার সুযোগ আছে দু'দুটি বুকে

ক্ষমা করো প্রভু... স্বর্ণাভ করো ওহো; হিমগৃহে হাত-পা বাঁধা প্রবাসে

৫.
সময়ের কাছে আমিও ঋণী, মুঠোফোনে তোমার যত বিড়ম্বনা
সময়ের দায়ভার খুঁজে না কেউ; দিবস-দশকে আমিও নিরুপায়
কেউ নেই কাছাকাছি তুমিও ইদানীং রিংটোন-ডিশএন্টিনা

ঘৃণা করো না প্লিজ! কষ্ট হলেও জমা রাখো বুকে গোপন প্রণয়

ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ে হৃদপিণ্ডের জ্বালা স্বপ্নজাগা চুম্বন
সম্পর্ক ধরে রাখতে পারিনি, হয়ত ভুলভ্রান্তি ছিল তখন
ঘর তো চিরকাল পরই হয়, ভাবনা নেই এখন নিজের দখলে

একদিন আমিও হারাবো সেদিন তুমিও এসো ভাগ নিতে হলে

টুকরো পাতার গল্প

১. শুরু যেভাবে হয়েছিল
তাকে তুমি কোন অর্থে নেবে
          খারাপ না ভালো
কারণ, তুমি যে অর্থে নেবে
আমি তাকেই করবো অনুসরণ
                                     তবে ...


২.
প্রতি ভোরে ঘুম ভাঙে না
কেউ সাবধানও করে না
দু’পায়ের ফাঁকে অন্ধকার জমে
ক্রমে-ক্রমে রাতের আগ দিন আসে
                                     স্বপ্নদোষে

৩.
আশাহত করো না...রোডম্যাপ ভাঙা আয়না
বেঁধে দাও চোখ; বুকে রাখো বুক;
                                   লাজে চুম্বন করো না
দূরে থাকা ভালো; রোদে শরীর খুলো-
                             তাও বলবো না
মন খারাপ হলে তাকিয়ে দেখবো ভাঙা আয়না
চোখে দু’একফোঁটা জল ছাড়া কিছু দেখবে না


৪.
বিশ্বাস করো, ওই রাস্তার ধারে
ঝরে পড়া রোদে; ওই ঝোপের ভেতরে
তোমার অপেক্ষা করেছি টিলার উপরে
হেঁটে হেঁটে কুড়িয়েছি পাতা; ফল-মূল
                                      শুকনো ডাল
এদিক ওদিক ফিরে তাকয়েছি বারবার
দেখেছি শেয়াল শকুনের ফেলে যাওয়া
                                     -অসংখ্য হাড়


৫.
কেন আসনি, সে কথা বলনি
দোষ তবে কার? জানতে দাওনি
নিশ্চুপ বসে থাকার শেষদিনে মন-তনুমন
রাস্তায় পড়ে থাকে বিয়ারের ক্যান
ওভারটাইম পানীয় জল
                               কোকাকোলার বোতল
পরের বছর আমরাও পানিফুল


৬.
সহজেই বলা যায় কাঁপছে বোবাগাছ
তোমার মনের অনুতাপ : সরু জানালার কাচ
তাড়াও স্বপ্ন, শোনাও হাসি, পাশে দাঁড়াও
                                   আজ নেই বাছবিচার


৭.
সহজেই বলা যায় কে কোথায় থাকে
কোথায় আসা-যাওয়া; কোথায় লুকানো তাড়া
সহজেই বলা যায় অনেক কথা
তিনটি বছর কেটে গেল চিঠিপত্তর নেই
মান-অভিমানে নেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা


৮.
তুমি যে কাঁধে রেখেছিলে হাত
ধীরে ধীরে সেখানেও জমবে ময়লা—
                                             ঘাম
যে পথ হেঁটে এসেছি, সে পথে
রাতেও আলো ফুটে আমাদের দু’হাতে
আমরা শুধু তার পেছনই জানতাম
                                             -আগাম


৯.
সমান্তরালে দাঁড়ালেই গ্রহণ অর্থে যুঝে যাই
যুক্তি দাঁড় করাও; দ্বিমত করো সহসাই
কখনো মাথা নেড়ে মেনে নেই
বাস্তবতা তোমার অংশিদার নয় স্মৃতিকাতরতা
আড়ালে দাঁড়ালে লুব্ধদৃষ্টি আমাদের কাছাকাছি ডাকে
তখন অস্থিরতা ফুটে চারিদিকে


১০.
যখন বাস্তবতা জানলাম সান্ত্বনা
কেউ দেয় না; সাহসও হয় না
                   -একা ধরে রাখা
তামাশার ফটোগ্রাফ তুমি ছাড়া
                 বৃষ্টিহীন ভালোবাসা

১১.
দরজা জানালার ফাঁকে
              চোখের আর্তনাদ থাকে
তুমি জানো তো সব নাকি বুঝ না
নীরবতা জানুক; দেহের সুরে বাজুক
                                             কান্না


১২.
ফিরে যদি এসো স্মৃতি তাড়াতে যাবো
অলিগলি ঘুরে দেখবো পথ-ঘাট-মাঠ
                  স্বপ্নপ্রীতি যত ইটের পর ইট
যখন ফিরবে না নিরবতায় তখন
এক ফোঁটা শুকনো জলের সাথে মিশুক
তিনফোঁটা পানিফল; তারপর শুশুক
                          গ্লাস আর কাচ
বোবা আমি হলে তুমি...তুমি পাতাগাছ

বোবাসিরিজ

ক্ষণকাল বেঁচে থাকা শিশুবেলাকার টানে
বিশ্রী প্রয়োজনে আহা! নিঃসঙ্গ আযোজনে
আমাকে টেনে তুলো সখি প্রলয়ের দিনে
বলতে গিয়েও বলতে পারিনি, না বলার সুরাহা হয়ত ইটের গুড়াঁ প্লীজ কক্ষনো প্রশ্ন করো না তোমাকে বলতে গিয়ে চোখের আগে মুখে জাগে অম্লতা- কেউ যদি কেড়ে নেয় বিশ্বাস কেউ যদি জিজ্ঞেস করে না বলা কথা; কার তবে ব্যর্থতা... উঠুন গড়িয়ে রোদ নামবে তবু জোনাক বনে ফুটবে না শ্মশানচিতা। যদি পারো হ্নদি জলে খুলে রাখো নিস্পাপ আঁখি, জমিয়ে রাখা চশমার গুড়ো-গুড়ো ঘৃণা, একদিন লুপ্ত হবে সব স্মৃতি-প্রীতি অনাদিকারে ডুবে যাবে পরস্পরের বুক; জমজ বালিশের সান্তনা

আহা! ... কিছুই বলবো না তবু ,হলুদ সন্ধ্যে মানে এই তো বেলায় বেলায় কথকতা... তার মানে কি পিছনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা! আসন্ধ্যা-রাতে এখনো বাঁ পাজরে ব্যথা জমে, হাত পাতার ছলে জলসিঁড়ি বেয়ে আজো শিখিনি মূঢ়বার্তাপাঠ কিংবা হাতের তালুতে জাগা জলপাহারের রাত। কিন্তু তুমি জলজন্মে বৈষ্যম যাচো... যাচো ভাঙা-আয়না, পিঠে হাত রাখার অধিকার ভীমরতি খেলে যা-কিনা তুমি বলতে পারো দেহের কুশলতা।শরম ছেঁটে নিলে কার পাশে শোব, কার কাঁথায় লুকাবো মুখ; হাবুডুবু খেলা... তারচে ভালো- অনেক অনেক ভালো নিঃসঙ্গতা

রাত্রি ফুরাবে তাই ভোরের গন্ধ লাগে নাকে, ঘুম ভাঙলে চোখের উপরে গান করে পাখ-পাখালি; শীতল বাতাসে জানালার ফাঁক বেয়ে মনে হাজারো শূন্যগর্ভ কল্পনা জাগে... ভোরে তুমি আড়মোড়া ছেড়ে আনন্দে হাসো, পায়চারি করো স্নান ঘরের পাশে


শাড়ি পরা নারী নাকি নারী শাড়ি পরা? সে রহস্যেও জট খুলতে খুলতে আমাদের কেটে যেত অর্ধেক বেলা, গোলাপ দেখলেই বলতে এখন তোমাকে বলতে হবে কোনটি সদ্যফোটা? বলতাম তাকালেই হয় বুকের ভাঁজে গোলাপের পরাগ, শাড়ির ডোরা। লজ্জায় লাল হতো কার চোখ-মুখ দেহের চাপা ক্রোধে লুকিয়ে রাখতে কার দায়বদ্ধতা। মা শাড়ি পরে, সালোয়ার কামিজ পরো তোমরা; কখন তুমি কোমরে বেঁধে নেবে বলো শাড়ির কোঁচা


নিঃশ্বাসের ভেতর ঝরে যাবো স্বতন্ত্র সত্তায় এই ভেবে চিরকাল আত্ন-ভোলা ছবির মতো, আর তুমি নিজের ভেতর ভান ধরে তিড়বিড়ে হাসো দাঁতে কিড়মিড় করো...যেন সব স্বাদ তিতা ভুল বললে ক্ষমা হৃত-ব্যাকুলতা প্রেমজল নাকি জলে-প্রেমে হুলাহুলি করা, ঘোমরা মুখে চেটেপুটে খেয়েছো লাজ, রাগ ঢেকে বাজুতে রয়েছো খাড়া

ভুল হলে হাতের তালুতে জমা রেখো গ্রহণলিপ্ততা- আঘাত পেলেও তোমাকে ছাড়া কক্ষনো শুকাতে দেব না দুঃখযন্ত্রণা। শিয়রে জেগে আছি চুম্বনের টানে, সস্মতি ছাড়া কখনো চোঁব না দেহ স্পর্শজ্বালা। অলক্ষ্যে মুচড়ে ওঠে বুক; হাড়ে মেশানো করুণা। যা বলতে পারিনি তার জন্য আহত বুক ষোলআনা ব্যর্থভ্রমে তোমার মতো ক্ষুদ্রতম পাতাও চেপে ধরে বণেলা হাওয়া। মনের গোপন বিরূপতা যে অর্থে নেবে, অন্য অর্থে আমি হাবাগোবা


ওভাবে চলে যাওয়া মানে সান্ত্বনা হতে পারে না- কারণ বিপরীতে ফেটে পড়া ঢুলুঢুলু চোখ, শৈশবযন্ত্রণা হাত দিলে টোল খায় মোলায়েম গাল; চিকন-চাকন জলের পাশে তোমার নাকফুল আলিফের মতো খাড়া। ওষ্ঠে গোলাপি লিপষ্টিক একীভূত করে দেহের দু-পাশের হাওয়া। স্বত-হৃত এ বুক ঠুনকো আঘাতে ব্যথা পাবে না, শঙ্খা শুধু মনের শঠতা কিছু বলতে এসে ঝড়ো হাওয়ার পাশে ঠাই নিয়েছো তেপথীর মুখে, কেউ যদি ঠাওর করে লুটে খায় চোখের শরম নির্বাক হয়ো না গুপ্তদানা। হাঁটতে গেলে ক্লান্ত পায়ে লেগে থাকে ধূলি-বালি,ঘাসের গন্ধ দূর্বার কণা... একদিন পায়েরও বেঁড়ি বাঁধা হবে, সেদিনও আমরা হারাবো না নিজস্বতা

পরিবর্তন সিরিজ

১. অনেক হলো... এবার অদলবদল
           যেমন, রূপ পরিবর্তন
দেহের টানে খিলখিল হাসি, চোখে-মুখে
প্রকৃত সত্য উগ্র কালো-
শোকদুঃখ একশোতে একশ আসছে-
                                    অবশেষে
মরি আর বাঁচি দূরে ফুটে দেখাদেখি
একাংশ, দিন কাটে না- আর কত?

২.
তুমি জলের বুড়বুড়ি শব্দে স্মৃতি দেখছো গুনে
আমি ধানঝাড়া গন্ধে ছুটছি মিহিন বাতাসে
এই শহরে খোলা জায়গা নেই
শুকনো পাতার মতো হাঁটি ফুটপাতে
পার্কের বেঞ্চ...সমস্ত জায়গা জুড়ে মশকরা করে
কী হবে জানি না; মাথা ঠুকছি প্রত্যেক পাথরে

৩.
তুমি উর্ধ্বমুখী হলে তড়িৎস্পর্শে; ঘূর্ণি হাওয়ায়
তার আগে লোভ লিপ্সা হাঁপাতে হাঁপাতে রবিশস্য
ক্ষেতে চলে গেছে চৌষট্টি কদম হেঁটে, নিয়ম ভেঙে
কাদাপ্যাঁকে হাঁটো দেখবে তোমার দু-পায়ের ফাঁকে
গড়াগড়ি কাদাজলের অসংখ্য ফুটি


৪.
হাত ফসকালে বুক ধকধক করে;
                                      তারপর...
দু’খানা হাতের স্পেসে তোমার
                     দেড়হাত ব্রেকশো
কীভাবে কী হয়! এ দুশ্চিন্তায় আমি-


                             তারচে’ আধহাত ছোট
হাত না-ছুঁলে রঙচঙা দশনখ সন্দেহে ফুটে
অনেক হলো... বলতে পারো এমনই হরমামেশা ঘটে


৫.
অনেক জল গড়ালো ঠোঁটে নাওনি খুঁটে
ক্লান্তি দোষে বসে আছো পাশাপাশি
বলা যায়; জলপূর্ণ কলসে জেগেছো
জলের তাড়ায়; কার ইশারায়?
আশ্বাস পেতে পারো ঘোমটা খুলো বাঁশবনে
দেখবে জীবনগাঁথা বাঁশের জোড়ায় জোড়ায়


৬.
আমারও সংকোচ ছিল কুমারী পর্দায়
এই নিঃসঙ্গ বাঁশপাতাবনে, বর্ণেলা হাওয়ায়
কারা ছাই রেখে প্রাণ দিয়ে যায়, একা বসে ভাবে
তরুণ কুমার...তুমি রেফারেন্স খুঁজো না; প্লীজ!
                                           লজ্জাশীলা
অ্যাকোরিয়াম ভরে রাখবো তোমার জন্য দমকা হাওয়া


৭.

তোমাকে না-বলে ফিরেছি একা
এই সুযোগে জেনেছি কৃতকর্মের ফল
                                        এক্কা-দুক্কা
বুকে আগলে রাখো অংশীদার হাত
ক্ষমা করো আগে- পরে যত অনাঘাত
লুকিয়ে রাখো আঁচল ছায়ায় সারাদিন রাত
সময় ফিরে আসে রাস্তার ধারে; হাহাকারে
কিছুই বলতে পারি না তোমারে


৮.

পরে জেনেছি ওনাদের ডাকে চলে গেলে
ক্রমে ক্রমে শিখেছি ভালো থাকা ভালো
                                      ত্রিধারা জলে
জেনেশুনে যেমন খুলে যায় ঋণ
চলে যাবার সময় থমকে দাঁড়ায়-
তোমার চোখ, নাক, মুখ; অর্ধেক কান
আমি দেবো প্রণাম- যাঁরা দূরে হেঁটে যান


৯.
পথের দূরত্ব চেপে ধরার ক্ষমতা নেই
রান্না ঘরে ঘষা-মাজা করি; কাপ-পিরিছ
জগ-গ্লাস, গ্যাসের চুলা, বর্তনে খুঁটি
ভাতের দানা, ক্ষমতাসত্ত্বেও যেন চূর্ণদানা
কিন্তু অক্ষমতা বলতে পারো না
অভিশাপ যত মাথা পেতে নেবো
                       নিয়তির দোষ দেব না
যদি অন্য কোনো ছুঁতোয় থেঁতলে ওঠে
                          দেহ শীর্ণপাতা
হয়ত বা এমনি আমি- এমনি আমার বিমর্ষতা


১০.
এসবই সর্বনাশের কথা, আহাম্মক! বলে
দিনের বেলা, পিচরাস্তায় হেলেদোলে চলে
                                     উন্মাদ মহিলা
এসব নিয়ে ভাবি না; তাই ভাবনা যেমন
করে উড়ে সন্ধ্যায় পুড়ে- তাও কি বলা যাবে
                                                 সান্ত্বনা
বৃষ্টির দিনে ঘোলাজলে ঢুলছে স্মৃতি-কল্পনা
জলের তেষ্টায় একা হয়ে যাই কেউ জানে না
আজ তবে চক্রাকারে ঘুরুক দেহের অক্ষত বেদনা


১১.
হাসলে হৃদপিণ্ড সতেজ থাকে
ধানের গোছার মতন হেলেদুলে পড়ে
কাঁদলে দুঃখ কমে, হালকা থাকে মন
তোমার হাসি-কান্না কারণ ছাড়াই উঁকিঝুঁকি
দেয় যখন তখন। তাই ঝেড়েমুছে কান্নাগুলো
রুমালে বসাই, জলছাড়া হাসির টোল খেয়ে নেই
তুমি কাঁদলে গলা অব্দি জল খিলখিলে হাসে;
যদি হাসো তার নামে প্রণাম দেবো এবার
কুমারী পুজোয় যতটুকু জেনেছি দু’জনের বিশ্বাসে


১২.
ঘুরার শব্দে কখনো পেছন ফিরে তাকাইনি
কেন তাকাইনি ঘূর্ণি-লাটিম জেনেছে—
                                আর কাউকে বলিনি
একখণ্ড বিশ্বাসে দেড়খণ্ড পথ হাঁটি
পা দেখেনি নুড়িপাথরের সাথে কীভাবে
উড়েছে ধুলো... হাঁটার শব্দ জমেছে জামার
পকেটে তখন; ... তোমার কথা মনেই আসেনি
জুতার শব্দ হেঁটেছে পায়ে পায়ে
                                তাকে কিচ্ছু বলিনি


১৩.
যা দেখি ভালো লাগে না কিচ্ছু;
যেমন আছি বসে চুপিসারে
জটাফুলের ভেতর আটকে গেছে বর্ষা...
ফের বৃষ্টি এলে তুমি লুকাবে
                                 কোথাকার জলে?
তোমার ভালোলাগা নিকোটিন; কালোধোঁয়া
                            বাস্তবতা; বাষ্পেভরা


১৪.
তুমি প্রাণ করো প্রকৃতি; গ্রহণ করো সভ্যতা
তাদের বাগানে চেরীফুলে হাসি; মন খুলে বলি
গ্রহণ করো আমায়, বীজফলের সাথে- একসাথে মিশি
সে কথা শুনে ফুল ঝরেছে দু-হাতে; তুমি না-চাইতে
তাই; মাটিতে গন্ধ নেই- নেই পাখপাখালির
                                                         খেঁচামেচি
একা বসে ভাবি, মাঝে মাঝে চাউল খুঁটে গুনি
না-ফোঁটা বাগানে আসতে হবে ফিরে
                           কচুপাতার ডাঁটা ছিঁড়ে


১৫.


অনেকে বলে, দেহভারে রাত্রি নিতে হয় খুলে
পাথরভাঙার শব্দে আজকাল, ভিজে না করতল
ঘৃণায় কমে আর বাড়ে, স্বপ্ন দেখি না আর-
                                                     বছর জুড়ে

জল শুধু ফুলে-ফেঁপে ওঠে
                                সরলতার ঠোঁটে
তোমার কি মনে হয় পাতা ছুঁলে কী হয়
দুঃখ যত পাতায় লিখে রাখি, খাতার পাতায়
বংশ রক্ষা করে সেও ডালে গেঁথে রয়


১৬.
গাছ কেটে বন উজার করা ভালো
টাকা আয় কত হলো
ওই গাছটিকে বলি পাতা কেন সবুজ হয়
গাছে গাছে কী হয়
গাছেরও প্রাণ আছে, আছে অক্সিজেনের সতেজ খনি
আমরা সবাই মিলে এসো গাছ কাটা বন্ধ করি একটুখানি

১৭.
পাতা ঝরে গেলে গাছও সতীত্ব হারায়
তোমরাই বলো- নারীর সতীত্ব থাকে
                                        আরাধনায়
দেহফুল খসে পড়ে আগুনের দানায়
                                  আর আশাগুলো ...
পুরুষের সতীত্ব তবে কোথায় লুকায়?
হেঁটে গেলে জানি ছায়াও পেছনে হাঁটে
হাঁটলে কেন শরীরে ঘামজল ফুটে
                         কেন শরীরে গন্ধও ছুটে-


১৮.
রাগ করে থেকো না বেশি দিন
রাগ করলে তোমার মুখটি ভারি
হয়ে যায়, মনে হয় সব লোকালয়হীন
পাশে ফেলে শরীর থেকে টেনে নেবো
সব প্রতিশোধ, ফেরাতে পারবে না সেদিন
                                  পোশাকের খাপে।


১৯.
আমি ফিরবো অচিরেই তাই আঁকছি বুকের ভেতর
হৃদয়সংবাদ, সেদিন কষ্ট হলে ফিরিয়ে দেব না
তোমাকে, তীব্র রোদে কিংবা অলুক্ষণে হাওয়ায়
জানি সেদিন তুমি আসবে না, থাকবে না পাশাপাশি
এসব মনে হলে উর্ধ্বশ্বাসে কষ্ট জমে যায়—
                                             বুকে জমে থাকে কাশি


মা-মাটি গাছলতাপার জন্য মন কাঁদে দিবানিশি
কেন তোমরা বারবার বলো এখন আমিও ভিনদেশী

মিনতি

আমাকে শান্তি দিয়ো যত পারো তার আগে ক্ষমা করো এবারের মতো
ভালোবাসা তরাজ জেনে রজঃস্বলা কালে
বৃষ্টিকাঙ্খা ভালোবেসে কোন পাপ করিনি—
যতটা পাপ করেছে তোমার মাকড়িসহ
পুরোটা শরীর

তুমি ভুলে গেছ ইকড়ি-মিকড়ি খেলা স্বল্পস্মৃতি
নখ দিয়ে কেটে ফেলি অনভিপ্রেত যত অসঙ্গতি


সরে যেতে যেতে যাবার ভেতর তাড়া খেয়ে ফিরি

বিচরণ

দূরত্ব মেপে দেখো নির্জনতা আগে-পিছে তারচে’ কম হলে কার কী যায় আসে
যতটুকু মিশ্রণ হলে নিরাপদে থাকা যায়
দ্রবণে নয় কিন্তু দ্রাবকের আসে-পাশে
আরো বেশি হলে ভালো, দেখবো তোমার
দেহের ভাঁজে কার দেহ লুকায়? ভয় নেই
রক্ত চুষে বেড়াবে রক্ত কণিকায়

দৃষ্টি

চেয়ে থাকলে চোখের সৌন্দর্য বাড়ে না দৃষ্টির অধীরতা নিয়ে কাঁপছে ভুরু
দৈনন্দিন চোখে লুকিয়ে থাকে অশ্রু
সন্তাপ; অর্থহীন উন্মাদনা
চোখ তোলে দেখবে না কেউ-
জল গলে গলে কেন বাড়ছে জলের ফেনা
না-দেখার উত্তাপে কতটা বাড়ছে পরস্পর কল্পনা

রোজগার

কাজের কষ্ট ঘামই বুঝে এখন অবশ্য রোজগারের দুঃখ তাকে
ছোঁয়ালে সেও শ্রমের বিনিময় খোঁজে
আমি কাউকে খুঁজি না; শুধু দয়া না পেলে

স্বপ্নের মাহাত্ম্য কী রকম? বিশ্বাসও নেই বিলকুল
সব কিছুতে তোর বিশ্বাস ষোল আনায় অটল
সে সব জানতে তোর কাছে ফেরাই একমাত্র সম্বল

তোর সুখ আছে জেনে

রোদে দাঁড়ালে ভেঙে যায়                         অলস সময়
ছায়ায় দাঁড়ালে রোদের তীব্রতা
তোর দিকে যায়, তোকেই পোড়ায়
বিকেল হলে সূর্য ডুবে যায়
তখন কেবলি আঁধার ঘনায়
আঁধার ঘনালে বহু দেনার লোভে
রাত্রি ফেটে যায় ঘুমহীন লোভে
দৃষ্টির ঋণ অনুভবে পুড়ে
কিন্তু জ্বলন শিখতে পারেনি অন্ধকার
তোর সুখ আছে জেনে
সুখে-দুঃখে করছে হাহাকার


রোদে দাঁড়ালে ভেঙে যায়


অলস সময়


ছায়ায় দাঁড়ালে রোদের তীব্রতা


তোর দিকে যায়, তোকেই পোড়ায়


বিকেল হলে সূর্য ডুবে যায়


তখন কেবলি আঁধার ঘনায়


আঁধার ঘনালে বহু দেনার লোভে


রাত্রি ফেটে যায় ঘুমহীন লোভে


দৃষ্টির ঋণ অনুভবে পুড়ে


কিন্তু জ্বলন শিখতে পারেনি অন্ধকার


তোর সুখ আছে জেনে


সুখে-দুঃখে করছে হাহাকার

সমুদ্র সৈকতে একদিন

সমুদ্র পাড় ঘেঁষে হাঁটছো... ভাবছো স্বপ্নহীন কাকে বলে, বলছো সব অনুভূতি অন্যরকম লাগে বাতাস তুমি কী জানো— পায়ের আওয়াজে ঘুঙুরও কীভাবে হাঁটে, চুল তোমাকে নিয়ে এক সাথে উড়ে, চুলগুলো কীভাবে জড়িয়েমড়িয়ে যাচ্ছে নাকমুখ, চোখে; দু-একটা ঢুকছে দাঁতের ফাঁকে। অথচ কথা ছিল এক সাথে ঘুরে বেড়াবো, হাতে হাত রেখে ফিরবো মর্মরিত হাওয়ার তাড়া খেয়ে।
সমুদ্র স্নান শেষে তুমি সমুদ্র সৈকতের কাছে দাঁড়ালেও সমুদ্রের বুকের অজানা দুঃখগুলো দেখতে পারবে না; সব দুঃখ বুকচাপা দিয়ে তার অনাধিকাল বেঁচে থাকার স্বার্থকতা। তুমি কি জানো, সমুদ্র বুকে কতজন ফেলে গেছে তাদের স্মৃতি-স্বপ্ন; হাসি-কান্না; হয়তো জানো কিংবা জানো না- সেই একদিন সমুদ্র স্নান শেষে আর দেখা হলো না।


শব্দ

ছায়ার নিচে সে যদি রোদ কুড়ায় তবে সেলাইকলের টানাটানা শব্দগুলো
বাদ যাবে কেন, কলঘরের একটানা শব্দও
                                                   কুড়াক
নৈঃশব্দ জানে না সোনামুখী সুইয়ের ছিদ্রকথা-
সুতোহীন দীর্ঘশ্বাসে যতটা থেকে যায়; ওড়াটাই
শুকনো পালকে জ্বররুগ্নতা...
সেও যদি উড়তে পারে তবে বালুচরে না-হেঁটেও
চোখের ভেতর জেগে উঠবে চর- তারপর
নিঃশ্বাসে মশলার ঘ্রাণে লোভ বাড়ে; কলকব্জা-হাড়ে
দগ্ধপাঁজর জুড়ে চুম্বনের হাসি পাবে, মাংশ খোললে

স্বপ্নহীন

তৃষ্ণা যদি জলের কাছে হার মানে... ভেবো না ধ্যানে গালের বিন্দু-বিন্দু জল ফুটেনি দেহসন্তরণে

আমি তো বলিনি, তোমার চোখ আমার দেহ পোড়ায়
শূন্য আয়োজনে স্বাদগন্ধ পাবে না, তোমার ক্লান্তিটুকু অন্যায়

স্বপ্ন একমুঠো মাটি... দু’মুঠোজল... পোড়াকয়লা, তারপর জানি না
পুরোনো কষ্টগুলো ভালো থেকো, মৃত্যু হলে শেষকৃত্য হবে না

পৃথিবী যত সুন্দর, তারচে সুন্দর চোখ— তোমার হাসি
যদি ইচ্ছে ধ্বংস করো, যতদূরে মরে-পচে-ভাসি

স্নান ঘরে একা

একা ভেবেছি... একা ভেবেই জেনেছি স্নানঘরে লাজ খুলে গেলে, জলের শব্দে
হারানোর কিছুই নেই জল ছাড়া
কেউ জানে না দেয়ালে কেন জলপড়ার শব্দ
কানে বাজে, কেন ঈর্ষায় পুঁতে রাখি জলসহ
                                              রহস্যময় ছায়া

মগ-বালতি নীরবে পড়ে থাকে দেহের লোভে
                                   স্নানঘরের কোণায়
শীতকাঁপুনিতে ঝরনার গরমজল হাত, মুখ-
চুলসহ সারা গতরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, গড়িয়েও যায়
যত দুষ্টতা লুকিয়ে রাখে চোখ আর আয়নায়

পাজরের হাঁড়ে

অন্যান্য প্রসঙ্গ মনে না-রাখাই ভালো শুধু মেনে নিলেই হয়, যা দেখছে চোখ
দেড় ক্রোশ দূরে শিকারির ছুঁড়ে ফেলা
                                                তীর!
তারচে’ বেশি কিছু বলার নেই, তুমি সবই জানো
                             হৃদয়শিকারি...ক্ষতিকর

তুমি হয়ত বদলাবে না কথা, আপন মনে
যদি তাই হয় তবে আমি গোপনে লুকাতে
যাবো না আর তোমার পাঁজরের হাড়ে

ফেরারি পর্ব ৬

বালিশ থেকে মাথা তের-চোদ্দ ইঞ্চি দূরে ঘুমিয়ে আছে। এই ব্যবধান কীভাবে হলো, ঘুম থেকে জেগে তাই ভাবছি...আর ভাবছি একটি লুপ্ত স্বপ্ন দেখার কথা ছিল ভোরে। কিন্তু তা হলো না, কেন দেখা হয়নি; কেউ দায় স্বীকার করেনি, নিজেও জানি না। ফলে সদ্য ফোটা সূর্র্র্য্যফুল দেখে ভিজে যাচ্ছে ভোরের ছায়াহীন বন। কার দায় বেশি ছিল তুমিই বলো এখন; ঘূর্ণি গ্র্যাভিটেশন।

তামা-কাঁসা

তুমি জানলে-না পিতলের বাটি...ভাতের সরা শরীর খুলেছে ঘামে তুমি খুলে আছো
ব্যথা সরাতে কাঁটা চামচের ফাঁকে-ফাঁকে
                         অ্যালুমিনিয়াম
তুমি কী জেনেছ কিছু জলকলসি, পরিপূর্ণ ঘড়া
জলের ভেতর রোঁয়ে যাও স্মৃতি: তামা-কাঁসা

একটি দৃশ্য দেখে

নরম রোদে পরস্পরের লুকানো হাসি দেখে
কোলাহল সেচে বসে আছো লোলুপ দৃষ্টিতে
বসে বসে ক্ষতবুকে সজোরে বাজাছো করাঘাত
ছায়ারহেলান থেকে খণ্ডিত করেছে— শোকজল
আর ভাবছো একটুকরো অনীহা থেকে সুর বাজে না

রোদকণ্যার বুকে
দু’হাতের অল্প-অল্প চাপে থেকেই যাচ্ছে অনীহা

                                    না ফোটা তালুর উপরে
তাতে ভাবছো তিনটুকরা স্বান্ত্বনা একাই কাদেঁ

নরম রোদে আমরা তো লুকাইনি অবুজ হাসি
তুমি কি সব দেখতে পাও, না-বসে পাশাপাশি









অদৃশ্য

না-দেখা দৃশ্যর ভেতর সবই সুন্দর!

তুমি কি জানো? শোকপাখি আর স্মৃতিফুলের ঘ্রাণ
শুঁকে নেবার কোলাহল; অস্ফুট থাকার প্রথম কৌশল
যে হাতে ছড়াচ্ছে মলা-ঢেলা আঁশটে গন্ধ; অন্যহাতে
থেমে গেছে একান্ত জিজ্ঞাসা-বিব্রতবোধ; অসংখ্য ক্ষতে

অদৃশ্য ছুঁলে কেঁপে ওঠে ভূমি-তমালের ডাল
দুর্ভোগ শেষে তুমি ভেজা হাতে মরা জল

সে হাতে সবই সমাধান; কড়কড়ে পাউন্ডের ঘ্রাণ
দীর্ঘশ্বাস বুকেচাপি দেয়ালে পিঠঘেঁসে অনর্গল গাই গান
তোমরা দু-চোখ ভরে তাকাও; জলে মুখ লুকাও; এতো জল

এতো-এতো মুখ রেখে, তাকে যে ঠকানো গেল না রসানো জলে

ভাব

শীতরাতে স্বতঃস্ফূর্ত ঘুম কেনো জানি একা শুতে পারে না পুরনো গল্পের
ভেতর, পারিপার্শ্বিক নারী! জানতে না বুঝি? খরা-দেহে কষ্টফুল
কিভাবে খেয়ে ফেলছে হৃদয়; আহ্! রাত্রিপোহানোর তাবৎ মহিমা
মনে হয় শীতহীন সহস্র রাতে... ভ্যাপসা গরমে সচরাচর
ঘুমোতে পারে না নাক টেনে টেনে মিশে যেতে থাকে চাওয়া,লালায়
বারবার জেগে ওঠা গোপনস্মৃতি চাপা পড়েনি উল্টো বহু ছলাকলা


ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনে, ঠিক কতটুকু দূরে প্রায়ান্ধকারে
পান করা যাবে স্বপ্ন-টপ্ন ছাড়া তামাক-চুরুটসহ আপাদমস্ত দেহ-বর্ণমালা


অন্ধকার ঘরে নীরব প্রত্যাশা অনবরত ফিরে, দেহের চাওয়া মানে বোধ
বোধে-উভয়চর, প্ররোচনা! উদাসীন রূপ ধরে বিচানায় পায়চারি করো
মশারির উপরে কাঁথা-বালিশ-মাথা, জরাঘুমে তাকে চিনিনি অথচ
উষ্ণশ্বাসে...ম্পর্শে সবই সুন্দর! ইশারা নির্ভর; খাপে বিনয় ধরি না চেপে
শুধু একদিন ঘুমের ভেতর নিজের আগ্রহকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরেছি
কিন্তু অসহায় সীমানা পেরিয়ে ফিরছে কঙ্কালের মতো দেহেরকাণ্ডকলাপে


গন্তব্যহীন পথ

অনেকেই বলে যা হবার তাই হবে, বলি-- কী হবে ভেবে তোমার সন্দেহের চেয়ে দেহের প্রতারণা রাজকণ্যার মতো
শ্বাসের ভেতর অতি সহজে ক্রমবিকাশ টেনে নিচ্ছে শ্বাস
ও-হৃদয়? কেউ কী জানে; হাসির আওয়াজেও কিছু রহস্য--
কিছু গোপন ইচ্ছে থাকে ...যা প্রকাশ্যে লাজুক হলেও
শাখা-প্রশাখাগুলি মনে রঙ মেখে গোপনে গোপনে বেড়ে ওঠে
হাটে-মাঠে-ঘাটে সংসার সমাজবোধ স্বপ্নের ভেতর ঢুকে।

আমার হাসি-ইচ্ছে দুটিই ছিল ফুটপাতে, র্পাকে...কিন্তু ভিনদেশে অজানা বাসস্টপে দাঁড়াই ম্যাপ দেখে গন্তব্য খুঁজি বাসের অপেক্ষায় ইচ্ছেকে চুপ হতে বলি। কখনো মটরওয়েতে নেমে লংড্রাইবের ফাঁকে উঁচাউঁচা দালান বিস্ময় জাগায়, মরা ডালপালা হাত বাড়িয়ে জানায় বরফের দেশে তীব্র-প্রাণ-শক্তি নিয়ে আজও আমরা এত অসহায়

যশ

যশহাতে আথারে-পাথারে আর বলবো না
প্রাণবহ্নি নাচো বাতাসে গেঁথে রাখো ঘ্রাণ
গলা-পচা-গন্ধ দেখে প্রত্যক্ষ করো চোখে
অন্যসব রেখে খুলে দেখো স্মৃতিবিধুরতা

কিন্তু তুমি! হতে পারে কীনা এই ভেবে কবেই
সরে যেতে যেতে পূর্ণ করেছো অগ্নিদগ্ধমুখ
ক্রমঈর্ষাবশে ইচ্ছেগুলোকে ত্রাণতহবিল ভেবে
বহুবার বিসর্জন দিতে চাচ্ছো বুকে... আক্রোশে

দেহ বৃন্দাবন

দেহের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে ধমনী-শিরাগুলো ক্লান্ত লোহিত রক্তকনিকায় জমাট বাঁধা ছেড়ে
দেহ কোষে লেগে আছেআদিঋণে
সারাক্ষণ দেহের খেল্ দেখবো বলে নিজেকে
আগলে রেখেছি গোপনে আর স্মৃতি রুয়ে হৃদাশ্রমে
অনুধাবন করছি বুক শুকিয়ে সত্যি কী পুড়বে;পোড়া
অন্তবেদনায়... আমাদের সম্পর্ক বাধানিষেধ ছাড়াই
চোরাগুপ্তা বিশ্বাসে অস্থি-মজ্জা স্পর্শ করে ত্রিকাল জলে
রক্তমাংশের উগ্র ঘ্রাণে

২.
তোমার হতাশার চোখ অবিরাম শরীর খুলে কী রকম
টেনে রাখছে ‘লোকচক্ষুভীতা’
কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণ বুক পাহাড়ে ওরনা টেনে; শেষ রাতে
ঘুমের ভেতর চেপে ধরি দাঁতে দাঁতে ধারালো কামড়
তৃষ্ণা মরে যায় কেউ হাসলে! শর্ত একটাই মনে পড়ে
কেবল দুপুরে দাঁত মাজি না বলে, বলছি জীবনভর
ব্যথা জাগাও; তবুও বলবো না স্তনফুলের মতো আগলে
রাখো আকর্ষন কেউ যদি না এসেও জাগায় দু’হাতের ছোঁয়ায়
উষ্ণ হতে কতক্ষণ? যত্ন করে রেখো গোপন মনে দেহ-বৃন্দাবন

ভান ধরা জল

লোভ, জেগে আছো জলে কৃষ্ণচূড়ার ডালে
এ-মালিকানায় কে হলো ব্যাকুলতায় নরম-ছরম
সে যা বোঝাল, মর্মকথা উৎকন্ঠা ওফ্
                                             পালাতে পারি না
সত্য কথা শুনতে শেষ পর্যন্ত কারোই ভাল লাগবে না
তাই আমতা-আমতা জটিলরহস্যে এই প্রথম তোমার
সামনে মিথ্যে বললাম, বিশ্বাসভঙ্গের দায় খুলে নিতে পারো
কিন্তু চাপা দাঁতের ফাঁকে এতো জল রেখে মাটি টিপে টিপে
বানাতে পারো না জল পাত্রের ছায়া

তুমি তো জানো, কারো বুকে দৃষ্টি এঁকে নেয়া চোখের ব্যাপার
দৃষ্টি যাবে না কারো বন্ধনের নেশায়, এমন সুযোগও নেই আজ
দু’চোখের ফাঁকে... উত্তরদিগন্তে রাত্রি অভিপ্রায় আজিকার নয়
তবু উদাস দৃষ্টি ছেনে ভাব জল সরিয়ে তারা আজ কার বাড়ি যায়

অংশ

দীর্ঘকাল ধরে অগ্রাহ্য ধারণাকে শোকে দুঃখে এমন কুশলী শিখিয়েছি বুঝলে...
                              নিদ্রাতাড়িত ভোরের প্রবাহ


নবান্নে এসে আত-পরিচয় যদি ধানগন্ধে উড়বার
স্বপ্ন দেখে চোখের গভীরে, আমার ফিরে আসা
জলের সন্ধানে বলছি না, শুকনো ঠোঁট কাঁপছে
                                  গোপন পিপাসার জলে
তুমি কিছু ঘূর্ণণ প্যাঁচ খুইল্যা দাও ম্যাজিক
সেও পোড়াক অক্ষত আঙুলে আরো কিছু শোক

২.
সবই জানতেন তবুও ‘পায়ের চাপে তাদের করেছ ধূলি’
তোমাকে কীভাবে আর বলি ভিনদেশে নিজ হাতেই
রান্না-বান্না করি, গ্যাসচুলার ফাঁকে অসীম তৃষ্ণা একাকি
জ্বলে ওঠে শেষরাতে...আর খাওয়া-খাদ্যের অরুচি
আজ না-হয় তাক্! সে সব কথা হারানো পাঠনামা
যেমন না-জেনেও সুপ্তির ভেতর রাত্রিফুলগুলো দীর্ঘপথ
ঘুরে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে মুখশ্রীর শোকে; যা কিনা দেহের
রজস্বলা কালে খুলে নিতে পারো ছলে, কৌতূহলে

৩.
এখনো বলি- ভেঙ্গে পড়ুক, ঝরে পড়ুক কাচ;ওহো স্বতঃসিদ্ধি
তুমি না-এগুলেই ছদ্মবেশে তাড়া আছে আহতরোদে
অর্ধেক অংশমাত্র টাটকা বুকে তেতে ওঠা, জেগে ওঠা ধ্বনিতে
আঘাতে আঘাতে ভীতরোদ শুকাবে না আ-ঢাকা দেহে

এরকম ধারণাকে দীর্ঘকাল বানিয়েছি অপূর্ণস্বপ্ন; আমলকিপাতা
ঋণের দায়ে আমি ঋণি হলে তৃষ্ণা নিবারণে তুমি হৃদয় শূন্যতা

পাহারা

ঘুমানোর জন্য নিঃশব্দ জায়গা খুঁজে দীর্ঘবাসনার ঠিক পূর্বে আমিও ঘুমাই

এরকম দিনে তুমিও জেগেছো; সত্যি কি তাই
রাত্রি যত বাড়ে আহা! আমিও সাজি রাত্রিসাজে

দেহের ভেতর সারাক্ষণ ক্ষরণ...বেফানা শরীর
শব্দ শুনলে ঘুমোতে পারি না, তাও কী কল্পনা

জীবন কেটে যাচ্ছে তিক্ত অচেনা স্বাদে তাও বলবো না
এতো যে বলো এড়াতে পারবে না দায়; র্নিঘুম রাত্রির

ঘড়ির কাঁটার শব্দ শুনে গুনে রাখি ঘুমের জরা
সারাক্ষণ আমাকে ঘিরে রাখে সুমধুর পাহার

অচেনা ভয়

যেভাবে আছি বেশ ভালোই শুধু দেখাশোনা কি আর বলিব পাশাপাশি বুঝে নিলেই হবে
নানান প্ররোচনায় ভাল থাকাটুকু বিগত দিনের
যা কিছু ভাঙার তাই ভাঙবে এরকম প্রশ্নে তোমার
হৃদয় হেসে-খেলে যায়
শূন্যলোকে মুখোমুখি দাঁড়ালে ঠার বোঝে স্তম্ভিত হই নতুনমুখে
অজ্ঞাত স্থানে দাঁড়ালে গন্তব্য ভুলে যাই নির্বাসনবশে
দু’জনের নিজস্ব অধিকার করাত কলের পাশে

তারপর?... যেভাবে আছি চুপিসারে ভালোই আছি
অপেক্ষা কেটে গেলে বুঝতে পারি না-ফোটা পাথর
হতাশার চোখে থাক্ আরো কিছু দিন বেদনাবিধুর
তুমি সহজে ফিরবে না জেনে দৃষ্টি মেলেছে কল্পনা
সেও সমরূপে ফিরছে না জেনে চেনা মুখগুলি আজ
লজ্জা ও ভয়ের কাছে বড় অচেনা

লাটিম

লাটিম ঘুরে ঘুরে চূড়ান্ত যাত্রায় মাটি চিরে ব্যথাচিহ্ন খুঁজে
লোকালয় ছেড়ে লোহার দুঃখ
কে খুঁজে বলো কাঠের অপেক্ষা

ছিলে পাশে তবুও নির্ণয় করতে পারিনি
কেনো লোহা মাটি খুঁড়ে লাটিম কেনো
ঘুরে দাঁড়ায় লক্ষ্য প্ররোচনায়
দেখো কি সুন্দর! লোহা-মাটির স্পর্শে
ছুটে যাচ্ছে ঘূর্ণিলাটিম দশআঙুলের ইশারায়

নিষেধ

কোন কথা আর সহজে বলতে পারি না কেউ কিছু বললে কান পেতে শুনি
যা কিনা তুই ভাবতে পারিস্ প্ররোচনা
দুঃখের ধর্ষকামে তুই পড়ে যাস্ ধাঁধাঁয়
তখন নিজেকে বিব্রত মনে হয়

কথা বলার আগে মনেই থাকে না
কোন কথাটি আগে বলতে হয়
কোন কথাটি শুনলে তোর কেঁদে ওঠে হৃদয়
কোন কথাটি বলতে মানা ছিল
তোর সাথে মিশবার ইচ্ছায়...

তোর অনুপ্রবেশ জেনে; মন কিছুই মানলো না কৌশলে
কোন কথাই আর সহজে বলতে পারি না জলে-অনলে

শাদা পাথর

শাদা পাথর সেও বোকা, কারো হাত ধরে সেও মূল্যবান সম্পদ হয়ে শৌখিন মানুষের
ড্রয়িংরুমে সেজেগুজে বসে থাকে কাচের দেরাজে
বালি মাটির সাথে মিলেমিশে পায়ে পায়ে হাঁটে--

হাঁটাহাঁটি করে বাহ্! ইটের পর গাঁথা ইট সারিবেঁধে চলে
আর রড-সিমেন্টের কথা পুরোপুরি আধুনিক
শেষ দেখা এরকম হবে যেমন নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা
দেয়ালে দেয়ালে আরে ওই নিমন্ত্রণের দিনে

তোমারও সংস্কার হবে গোপনে যেমন ইট-বালু-সিমেন্টে
শাদা পাথরগুলোকে পাহারা দিচ্ছে সমগোত্রীয় জেনে

বাড়ি নাম্বার ৩২

বুঝতে শিখেছি ‘ঘরের লগ্ন বারান্দায়’ আর জানতে শিখেছি এমন বাসনায় বাকিটাও পোড়াও! হাঁটতে-হাঁটতে একটি বাড়ির
স্মৃতি নিজের মতো করে খুঁজি; মুঠো খুলে দেখি রহস্য-স্মৃতি
হাতের তালুতে খলবল করছে ভয়াবহ দাগের চিহ্ন; যা দেখে
পূর্ণ-দিবসে তুমিও জন্মাতে পারো হা-করা বুকের স্বাদ কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ...। তোমাকেই বলতাম গোপন বেদনার কথা

                         যত অপেক্ষা ওই দুঃখিত পথের আড়াল
তাকে দেখি সিন্নিকটে এলে অশ্রুপতনের দায় ফেলে সেও বলে
শত অপেক্ষায় দাঁড়ানো আমি বত্রিশের বোবা চার দেয়াল

কুড়ানো মাশুল

কুড়িয়ে যদি নাও আর্তচোখে                       
                       কিছু তো হালকা হবে
-অন্ততঃ একদিন পাহারা দেবে
                        হৃদয়হীন মনের জোর


বাকিতে আপাত একদিন হলেও হৃদয় সম্বল
আর যা হবে সবই ভাববো ইচ্ছামৃত্যু কিংবা
                                               ভুলের মাশুল

অভিজ্ঞতা

পা-পোষে পা মুছতে মুছতে মনে হয়
পায়ের তলায় কিছুই থাকলো না জমা
শুধু শুধু জুতো পালিশ করে যাওয়া
আশ্চর্য! এ-ঘষামাজা; ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
নাহ্! আমি আর পারছি না,
রহস্য লুকিয়ে রাখা
ছলনা কি সান্ত্বনা কিছুই বুঝি না, কিছুই জানি না
পায়ে পায়ে পিষছি ক্ষতচ্ছাপ অসহ্য শূন্যতা

শাদা জামা

প্রতিদিন জামায় লেগে থাকে রোদ
                       মুচকি হাসে বালুর কণা
যখন বুকে বিনাশর্তে ঢুকে তোমার
দৃষ্টিভঙ্গি, মনেই থাকে না-
দীর্ঘশ্বাস ছুঁতে আস্থা কার দুটি পা...
তারচে’ ভালো যদি শরীর খুলে হাঁটি
রোদ শুষে নেবে হৃদয়; পুরনো কামনা

গ্রহণ প্রশ্নে আমিও পরাজিত

আমাকে না পোড়ালে ভালো এরকম আশায় লুকিয়ে রাখি
 গোছা গোছা গন্ধ পুরনো গামছায়, ঠান্ডা জড়াবে দেহে
এযুগে এসে ভাঁটফুলে ফুটে আছো এ-আশা পুরাটাই ভুলে গেছি
খোঁজাখুঁজি; পাতার আড়ালে ছায়া মনমরা হয়ে থাকতে পারে না
এরকম রূপকথা হাঁশফাঁশ ছাড়াই ভেবেছি; লোহা-পিতল-ষ্টীল
শেষ-মেষ কার শাসন মেনে ফেলেছি দীর্ঘশ্বাসে
চারদেয়ালের আলোতে মিশে

দীর্ঘতর ভাবনা বলছি ইশারা করো না, গ্রহণ প্রশ্নে আমিও পরাজিত
পাথরে পাথর ঠুকে বাজাচ্ছি পুরনোস্মৃতি পোড়ালেও পুরোটা অক্ষত

বেদনাশ্লোক

জন্মকথা কেউ মনে রাখে না, স্মরণে এলে বেদনাশ্লোক
 ফেরাতে পারিনি অবুজ দুঃখ... ফেরারি মানুষের মুখ


তোর নিকট যাবো না যত ইচ্ছে আয়ু বাড়–ক
মালেকুল মউত ডানে-বামে দেখে না-চোখ
একদিন মৃত্যুকথা লিখবো হাড়ে, লিখবো বুকে পোড়া
রূগ্নকথা- তোর আয়ু দ্বিগুণ বাড়ুক, বাড়ুক মোহের তাড়া


আমার দিকে ছুটে আসছে ঘাসফুড়িং সূর্যাস্তেও আগে
মৃত্যুর জন্য বর্ষাঋতু প্রিয়
সেদিন বৃষ্টিজল ছিটাবে না কেউ অঙ্গে

ঝরাকাঁটা

না-ছুঁলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে ইঞ্চি দশেক দূরে
                                    আঁকা-বস্ত্রবালিকা
ছায়ার পাশে খাড়া স্পর্শগাছ দু-দুটি কাঁটা
ঝুলা ডালে, ঝরা পাতায় পাখির বসবাস
এমন বেদনাহত রাতে তোমার কাছে
শরমিন্দা হবার ভয় কি ছিল একার


দ্বিধা কি ছোঁব একা? নাকি উল্টে রাখবো দেহের বোয়াম
খরায় পুড়ে না তাই ছলে খুলেছি জলের বোতাম

শীত

চোখের কাছে কাঁদতে নেই তোমাদের দুর্মরজল


শীতটা একদম সইতে পারছে না আলাভোলা শরীর
ভাব মনে,না-মিশতে মিশতে শীতের গুণাগুণ
যতটা চেপে ধরেছে... বলবো না ভীষণ আকুল
 ছিল না দাবী-দাওয়া আশনাই আঁশাফল
তুমি কিছু একটা বলো র্দুলঙ্ঘ্য কানের দুল



চোখের কাছে কাঁদতে নেই তোমাদের দুর্মরজল
নিত্যদিনে যারা শীতপ্রিয়, শয্যাসহা তাও গরমিল